
নগরবাংলা নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কৃষিতে ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদে যান্ত্রিকীকরণ তথা রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করায় কমে আসছে কৃষকদের ধান রোপন খরচ। সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িচং উপজেলার কৃষকরা বছর ব্যাপী শস্য বিন্যাসে ১০-১৫ দিন বাঁচিয়ে তিন ফসলি জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা কে যুক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস এরই অংশ হিসেবে উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের মাশরা গ্রামে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত যান্ত্রিক খামার ধারণার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৫০ বিঘা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারা রোপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে ১৫০ বিঘা জমিতে রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর-শোভারামপুর মাঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাসেম খান এমপির কিন্তু, তিনি ঢাকায় ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বানিন রায়। বক্তব্য রাখেন, ৯নং ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক ও ৮ নং ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইস্কান্দার আলী ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. মিজানুর রহমান ও ওমর ফারুক। তাছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোঃ রাসেল সারোয়ার, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার কেএম মাসুম বিল্লাহ সহ উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এবং স্থানীয় কৃষক- কৃষাণিগন।
উক্ত অনুষ্ঠানে,৫০ একর জমির মালিক ১০৯ জন উপকারভোগী কৃষক, বুড়িচং উপজেলায় কর্মরত উপসহকারি কৃষি অফিসারবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রকিস মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ ও আশেপাশের গ্রামের কৃষক সহ পাঁচ শতাধিক কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন। কার্যক্রমের বিবরণ: জমির পরিমাণ: ৫০ একর (১৫০ বিঘা) উপকারভোগী কৃষক: ১০৯ জন,জাত: ব্রি ধান৯২,জমির মালিকানা হিসাবে কৃষক প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৯০০ গ্রাম,ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম ডিএপি ও ৫০০ গ্রাম হারে এমওপি সার পাবেন। ইতিমধ্যে ৩০০০ কেজি ডিএপি ও ২৫০০ কেজি এমওপি সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ৪৫০০ কেজি ইউরিয়া সার প্রথম উপরি প্রয়োগের পূর্বেই আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ৫০ একর জমি রোপনের উদ্দেশ্যে ৪৫০০,ট্রে তে চারা উৎপাদন করা হয়েছে।
সকল জমি কর্মসূচির অর্থায়নে রোপন করে দেয়া হবে। মৌসুম শেষে সকল জমি কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তনের ব্যবস্থা করা হবে। সমলয় চাষাবাদের সুবিধা: ৫০ একর জমির জন্য কৃষকগণ পৃথকভাবে সাধারণত প্রায় ৮০০ কেজি, বীজ ব্যবহার করে ৩ একর জমিতে বীজতলা স্থাপন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে, সিডলিং ট্রের চারা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র ১ বিঘা জমি ও ৬০০ কেজি বীজ। ফলে বীজ, জমি, শ্রমিক ও সময় অপচয় কমে এসেছে। তাছাড়া বীজতলা স্থাপনের পর মাত্র ১ জন কৃষক বীজতলার পরিচর্যা, শৈত্য প্রবাহকালীন যতœ, ছত্রাকনাশক-কীটনাশক স্প্রে ইত্যাদি করতে পারবেন। যেটি কৃষকের পৃথক পৃথক বীজতলায় করতে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক ও সময় অপচয় হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে মাত্র ২৫-৩০ দিনের সঠিক বয়সের চারা রোপন সম্ভব হয়। ফলে ধানের জীবনকাল ১০-১৫ দিন কমে আসে। তাছাড়া, মেশিনের সাহায্যে রোপনে সঠিক গভীরতায় চারা রোপন সম্ভব হয়। ফলে প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা বেশি হয়। সর্বোপরি ফলন ১০-১৫% বৃদ্ধি পায়। বাইরের জেলার শ্রমিক নির্ভর বুড়িচং উপজেলার কৃষকদের ১ বিঘা জমিতে চারা বীজতলা থেকে তুলে রোপনে ৫ জন শ্রমিকের ১ দিন লাগে, খরচ হয় ৩৫০০ টাকা। উদ্যোক্তার মাধ্যমে রাইসট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ১ বিঘা জমি লাগাতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট, খরচ হবে ১০০০-১৫০০ টাকা। অর্থাৎ, বিঘা প্রতি শ্রমিক খরচ কমবে অন্তত ২০০০ টাকা। বোরো মৌসুমে ১ বিঘা জমির ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তবন্দী করতে ৬ জন শ্রমিকের সম্পূর্ণ ১ দিন লাগে, খরচ হয় ৪২০০-৫০০০ টাকা। কম্বাইন হারভেস্টারের সাহায্যে ১ বিঘা জমির ধান মাত্র ১ ঘন্টায় কর্তন, মাড়াই. ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা যায়। কৃষকের খরচ হয় ২৫০০ টাকা। অর্থাৎ, বিঘা প্রতি শ্রমিক খরচ কমবে আরো অন্তত ১৭০০ টাকা। সেই সাথে বোরো ধান দ্রুত ঘরে তুলতে পারলে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের কারণে মোট উৎপাদন খরচ কমবে বিঘা প্রতি অন্তত ৩৭০০ টাকা যা প্রায় ৩-৪ মণ ধানের দামের সমমূল্য। তাছাড়া, পরিশ্রম, সময় ও বীজের অপচয় রোধের পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধির ফলে কৃষকগণ সকল দিক থেকে লাভবান হবেন।