
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের থাকার জন্য দু’টি ডরমিটরি থাকলেও কর্মকর্তাদের সাথে রুম ভাগাভাগি করে থাকতে হয় শিক্ষকদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে ২৫২ জন শিক্ষকের বিপরীতে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ২৮ জন শিক্ষক। শিক্ষকদের অভিযোগ, একই ডরমিটরিতে ২ জন কর্মকর্তা টাইলস করা কক্ষে থাকলেও শিক্ষকদের মোজাইক করা স্যাঁতসেঁতে কক্ষে থাকতে হয়। এসব অসুবিধা নিয়ে কথা বলতেও বিব্রতবোধ করেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
সুপেয় পানির অভাব, সাপের উপদ্রব ও নানা কীট পতঙ্গের উৎপাত, স্যাঁতসেঁতে মোজাইকের ফ্লোর, পরিচ্ছন্নকর্মীর অভাব, অপরিচ্ছন্ন পারিবেশ, ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অধিকাংশ রুমে ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক পয়েন্টসহ নানা অপ্রতুলতা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ডরমিটরিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২৫২ জন শিক্ষক রয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ২৮ জন আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। যা মোট শিক্ষকের অনুপাতে মাত্র ১১ শতাংশ। আর মোট কর্মকর্তা রয়েছেন ৯৩ জন। তারমধ্যে ডরমিটরিতে থাকছেন ১০ জন। থাকার জন্য রয়েছে ৫ তলাবিশিষ্ট দুইটি ডরমেটরি। ডরমিটরিগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভবন দুটির বহিরাংশের রং বিবর্ণ হয়ে গেছে এবং অনেক স্থানেই রং খসে পড়ে গেছে। ভবনের ভিতর এবং বাইরের অংশ অপরিচ্ছন্ন। পরিচ্ছন্নতার জন্য নির্ধারিত কোন পরিচ্ছন্নকর্মী নেই। এছাড়া অধিকাংশ কক্ষের বৈদ্যুতিক পয়েন্টগুলো ত্রুটিপূর্ণ। নেই সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা। এছাড়া ডরমিটরিগুলো পাহাড়ের উপর হওয়ায় সাপের উপদ্রবসহ নানা কীট পতঙ্গের উৎপাত যেন নিত্যসঙ্গী।
এছাড়া করোনা মহমারীর কারনে শিক্ষাব্যবস্থা অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ায় ক্লাস অনলাইনে নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। কিন্তু ডরমেটরিতে সরবারহকৃত ইন্টারনেট ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ক্লাস নেয়ার সময় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। আর কর্তৃত্বের সুবাদে কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের ফ্ল্যাট টাইল্স করে নিলেও শিক্ষকদের ফ্ল্যাটগুলো শেওলা পড়া পুরানো মোজাইক অবস্থাতেই রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ভবন দু’টির সামনে একটি সিসি টিভি ক্যামরা বসানো হলেও তাও নষ্ট হয়ে আছে বলে জানা যায়। এদিকে বাসভবন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আসাদুজ্জামানও এ ডরমেটরিতে বসবাস করছেন।
ডরমিটরিতে অবস্থান করা এক শিক্ষক বলেন, “অপ্রতুল এ পরিবেশে ট্রেজারারের বসবাস করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। আরেকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা আবাসস্থলে নূন্যতম যে সকল সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার কোনোটিই এখানে নেই। পাহাড়সম সংকট নিয়ে ডরমেটরিগুলোতে আমরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। ক্ষমতার প্রভাবে কর্মকর্তা টাইলস করা রুমে থাকেন। আর আমরা শিক্ষক হয়েও মোজাইক করা রুমে থাকতে হচ্ছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই লজ্জা।”
এসব বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ শামিমুল ইসলাম বলেন, “এটা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং ভবনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে এটা সত্য। প্রশাসনকে জানানোর পর তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।
শিক্ষকদের এমন নিম্নমানের জীবনযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী জানান, “সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বড় অংকের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।”